শনিবার ০৫ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

পিলখানা হত্যাকাণ্ড: চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায় মামলা

নিউজ ডেক্স ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:০১ পি.এম

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ডে নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন।

পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এ মামলায় আরও ২০০ জন সাক্ষীকে বিচারিক আদালতে উপস্থাপন করা হতে পারে।

বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

১৫ বছর আগে ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরের (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি) সদর দপ্তর ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহ হয়।


সেদিন বিডিআরের কয়েক শ সদস্য পিলখানায় নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালান। প্রায় দুই দিনব্যাপী চলা বিদ্রোহে বিডিআরের তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। সব মিলিয়ে ৭৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পিলখানায় বিডিআরের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালনরত সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের পরিবারের সদস্যরাও সেদিন নৃশংসতার শিকার হন।

তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন। এখন আপিল শুনানি করতে গেলে আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বেঞ্চ প্রয়োজন হবে। আসামি ও সাক্ষীর দিক থেকে এটি অনেক বড় মামলা।

পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়। এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই সবচেয়ে বড় মামলা। বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এ মামলার রায় দেন।

রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান।

দুই ধাপ পেরিয়ে হত্যা মামলা, আপিল কার্যতালিকায়

যেকোনো হত্যাকাণ্ডের মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের পর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে অনুমোদনের জন্য আসে। পিলখানা হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়।

পিলখানা হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত
রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন।

আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। অন্যদিকে হাইকোর্টের রায়ে যাঁরা খালাস পেয়েছেন এবং যাঁদের সাজা কমেছে—এমন ৮৩ জন আসামির বিষয়ে ২০টি লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এই শুনানি হবে আপিল বিভাগে।

রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন। হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন।
আইনজীবী সূত্রগুলোর তথ্যমতে, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ হওয়ার পর ২০২০ সালে রাষ্ট্রপক্ষ পৃথক লিভ টু আপিল করে। অন্যদিকে আসামিপক্ষ ২০২১ ও ২০২২ সালে পৃথক আপিল ও লিভ টু আপিল করে। আসামিপক্ষের আপিল গত বছরের মে মাসে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষ। এর ধারাবাহিকতায় গত ১২ নভেম্বর চেম্বার আদালতে বিষয়টি ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। এরপর আসামিপক্ষের আপিল চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে।

এই মামলায় আসামি ৮৩৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৫২ আসামি ইতিমধ্যে মারা গেছেন। ১৯ আসামি এখনো পলাতক। বাকি আসামিরা কারাগারে আছেন।
এ মামলা সম্পর্কে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দিয়েছিলেন। এখন আপিল শুনানি করতে গেলে আপিল বিভাগের চারজন বিচারপতির সমন্বয়ে একটি বেঞ্চ প্রয়োজন হবে। আসামি ও সাক্ষীর দিক থেকে এটি অনেক বড় মামলা। তাই আপিল শুনানিতে কয়েক মাস লাগতে পারে। যে কারণে আপিল বিভাগের আলাদা একটি বেঞ্চ করতে হবে। হয়তো অচিরেই বেঞ্চ হবে, তখন শুনানি শুরু হবে।

চলতি বছরই এ মামলার আপিল শুনানি শুরু হবে বলে আশা করছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ এম আমিন উদ্দিন।

উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে এখন বিচারপতির সংখ্যা ৬। তাঁদের মধ্যে একজন বিচারপতি এ মামলায় হাইকোর্টে রায় দিয়েছেন।

হাইকোর্টে এ মামলায় আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী মো. আমিনুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পিলখানা হত্যা মামলায় আপিলের ওপর শুনানি শুরু হলে স্বাভাবিকভাবেই অনেক দিন সময় লাগবে। এতে আপিল বিভাগের অন্যান্য মামলার বিচার কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। আপিল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ সাপেক্ষ্যে এই মামলা (আপিল ও লিভ টু আপিল) শুনানির জন্য পৃথক বেঞ্চ গঠন করে দেওয়া হলে তা দ্রুত নিষ্পত্তি হবে। বিষয়টি প্রধান বিচারপতির বিবেচনার ওপর নির্ভর করে।

এখন প্রতি মাসে চার দিন করে শুনানি হচ্ছে। আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের সাক্ষ্য শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সুরতহাল, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে।
কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল

১৫ বছরেও নিষ্পত্তি হয়নি বিস্ফোরক মামলা

বিস্ফোরক আইনে করা মামলার সাক্ষী ১ হাজার ৩৪৪ জন। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ২৭৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ ও ২৯ তারিখ সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে। এ মামলার বিচারকাজ চলছে পুরান ঢাকার বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসাসংলগ্ন মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী এজলাসে।

এই মামলায় আসামি ৮৩৪ জন। তাঁদের মধ্যে ৫২ আসামি ইতিমধ্যে মারা গেছেন। ১৯ আসামি এখনো পলাতক। বাকি আসামিরা কারাগারে আছেন।

এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম কৌঁসুলি মোশাররফ হোসেন কাজল প্রথম আলোকে বলেন, এখন প্রতি মাসে চার দিন করে শুনানি হচ্ছে। আসামিদের জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেটদের সাক্ষ্য শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সুরতহাল, ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী ও ভুক্তভোগী পরিবারের সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে। হত্যা মামলায় ৬৪৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। বিস্ফোরক আইনের মামলায় হয়তো আরও ২০০ জন সাক্ষী আদালতে উপস্থাপন করা হবে। চলতি বছর এ মামলার নিষ্পত্তি হবে বলে আশাবাদী তিনি।

বিদ্রোহের বিচার

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিচার হয়েছে এই বাহিনীর নিজস্ব আইনে, যা সামারি ট্রায়াল (সংক্ষিপ্ত বিচার) নামে পরিচিত। তাতে ১০ হাজার ৯৭৩ জনকে বিভিন্ন ধরনের সাজা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ৮ হাজার ৭৫৯ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়। অন্যরা প্রশাসনিক দণ্ড শেষে আবার চাকরিতে যোগ দেন।

এ ছাড়া সারা দেশে বিশেষ আদালত গঠন করে বিদ্রোহের বিচার করা হয়। বিশেষ আদালত ৫৭টি মামলায় ৫ হাজার ৯২৬ জন জওয়ানকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন। বিশেষ আদালতে বিচার চলার সময় মারা গেছেন ৫ জন।

২০০৯ সালে বিদ্রোহ ও হত্যাযজ্ঞের সেই ঘটনার পর বাংলাদেশ রাইফেলস বা বিডিআরকে পুনর্গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে সীমান্তরক্ষী এই বাহিনীর নাম হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।


 

আরও খবর

news image

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

news image

মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮-তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন

news image

৫০ জনের ৪৮ জনই আসেন তদবির নিয়ে: উপদেষ্টা আসিফ

news image

এক যুগ ধরে ৩৭টি ট্রেনের মধ্যে ৩২টি ট্রেন রিপন-লুনা দম্পতির দখলে

news image

আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের বৈঠক

news image

বাংলাদেশ গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করল 

news image

জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত

news image

দুদকে সারজিস ও হাসনাতের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের দল

news image

প্রভাবশালীরা নামে-বেনামে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তার হিসাব হচ্ছে : ড. ইউনূস

news image

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন মাহফুজ আলম

news image

অপ্রয়োজনীয় কোনও প্রকল্প যেন না নেয়া হয়: তথ্য উপদেষ্টা

news image

সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ ৭ বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা

news image

৫ উপদেষ্টার দপ্তর পুনর্বণ্টন

news image

বিএসএমএমইউ’র অধ্যাপক সায়েদুর রহমান নতুন উপাচার্য 

news image

জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী

news image

হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হচ্ছে পহেলা সেপ্টেম্বর

news image

সচিবালয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ছাত্ররা মোকাবিলা করেছে: আইন উপদেষ্টা

news image

কখন নির্বাচন হবে এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত : ড. ইউনূস

news image

পরিকল্পনা উপদেষ্টার সাথে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

news image

সরকার সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর : ধর্ম উপদেষ্টা 

news image

পুলিশে কোনো দুর্নীতি মেনে নেয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে : পার্বত্য বিষয়ক উপদেষ্টা

news image

ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

news image

দেশের মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছে আমি অভিভূত : প্রধান উপদেষ্টা

news image

ফেনীতে মোবাইল টাওয়ার সচল রাখতে ডিজেল ফ্রি'র নির্দেশ

news image

ফেনীতে মোবাইল টাওয়ার সচল রাখতে ডিজেল ফ্রি'র নির্দেশ

news image

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এনজিও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

news image

রোববার থেকে চলবে মেট্রোরেল

news image

ফেনীতে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান