শনিবার ১৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

বঙ্গাব্দ
জাতীয়

ঢাকায় চড়া দাম হলেও ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না কৃষক

নিউজ ডেক্স ২৩ মার্চ ২০২৪ ০৪:২৬ পি.এম

ফাইল ছবি। ফাইল ছবি।

রাজধানী ঢাকার বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও খুচরা বাজারে সব ধরনের সবজি বাড়তি দরেই বিক্রি হচ্ছে। অথচ সেই পণ্যের উৎপাদনকারী মাঠপর্যায়ের কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষক ফসল ফলাচ্ছেন; কিন্তু ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। কৃষকের শ্রম-ঘামের উৎপাদিত ফসলের লাভের পুরো অংশই নিয়ে যাচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। 

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এসব পণ্য কৃষকের কাছ থেকে ভোক্তার কাছে যেতে অন্তত তিন দফা হাতবদল হয়। এ প্রক্রিয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা কৃষকের চেয়ে অনেক বেশি লাভ করেন। এ কারণেই ঢাকার সবজি বাজার আর উৎপাদন এলাকায় পণ্যের দামে বিস্তর ফারাক।

কয়েকদিন আগেও নাটোরে সবজির বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ৫ টাকা কেজি দরে। মুলার কেজিও ২ থেকে ৫ টাকা, প্রতি পিস লাউ ৫ থেকে ৭ টাকা, শসার কেজি ১০ থেকে ১৫ টাকা, করলা ২০ থেকে ২৫ টাকা কেজি, লালশাকের আঁটি এক টাকা, ধনেপাতা ৫ থেকে ১০ টাকা কেজি। অথচ ঢাকায় এসে ভোক্তাপর্যায়ে এসব সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে গড়ে ৫ থেকে ১০ গুণের বেশি।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, এক কেজি শিম উৎপাদন করতে খরচ হয় ৬ টাকা ৮৮ পয়সা। এ ছাড়া প্রতি কেজি টমেটো ৯ টাকা ৬৯ পয়সা, বেগুন ১০ টাকা ২৬ পয়সা এবং প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপির উৎপাদন খরচ প্রায় ১০ টাকা। প্রতিটি লাউ উৎপাদনে ব্যয় হয় ১৩ টাকা ২০ পয়সা। উৎপাদন খরচ অনুযায়ী শিমের কেজি কিংবা একটি লাউয়ের দর কত হওয়া উচিত? যদি ধরা হয়, শিমের উৎপাদন খরচ ৭ টাকার সঙ্গে পরিবহন, রাস্তায় বিভিন্ন চাঁদা, আড়তের কমিশনসহ কেজিতে গড়ে ১০ টাকা খরচ আছে। তাহলে মূল খরচ দাঁড়ায় ১৭ টাকা। আর প্রতিটি লাউয়ের খরচ দাঁড়ায় ২৩ টাকা।

শুক্রবার(২২ মার্চ) ঢাকার নিউমার্কেট, শ্যামবাজার, সূত্রাপুর, সেগুনবাগিচা ও কারওয়ান বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, লম্বা বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। পাকা টমেটো ৫০ থেকে ৬০, মূলা ৩০ থেকে ৪০ এবং ফুলকপি ও বাঁধাকপির প্রতিটি মিলছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়। প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। এ ছাড়া গ্রীষ্মকালীন সবজি ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০, ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে গতকাল সবজির উৎপাদনস্থল বগুড়া ও নাটোরের কৃষকরা প্রতিটি ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৫ থেকে ১০, মূলার কেজি আড়াই টাকা, প্রতিটি লাউ ৫ থেকে ১০ টাকা এবং লম্বা বেগুনের কেজি ৫ থেকে ১০ টাকার মধ্যে বিক্রি করেছেন।

বগুড়া থেকে সবজি এনে ঢাকায় বিক্রি করেন কাদের হোসেন। কীভাবে দর বাড়ে, তার কিছুটা ধারণা দেন তিনি। তার মতে, ক্ষেত থেকে সবজি নিয়ে স্থানীয় আড়তে যান কৃষক। সেখান থেকে কেনেন ব্যাপারীরা। এখানে সবজির মোট কেনা দরের সঙ্গে ৫ শতাংশ আড়তদারি দিতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকার পণ্যে ১০৫ টাকা দিতে হয়। সবজি ট্রাকে তোলা বাবদ শ্রমিক খরচ প্রতি ট্রাকে ২ হাজার টাকার মতো। বগুড়া থেকে ঢাকায় আনতে ভাড়া লাগে ১৪ থেকে ১৭ হাজার টাকা। প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১২ টন আনা যায়। ঢাকায় আনার পর প্রতি ১০০ টাকার সবজি বিক্রির বিপরীতে আড়তদারি দিতে হয় ৬ টাকা। এর মধ্যে রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশকে দিতে হয় চাঁদা। সরকারদলীয় নেতাদের কাছ থেকে টোকেন নিয়ে চাঁদা দিতে হয়। এসব খরচ ও লাভ যোগ করে দেখা যায়, ১০০ টাকার সবজির বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা।

প্রায় দুই যুগ ধরে শ্যামবাজারে খুচরা বাজারে সবজি বিক্রি করেন নুরুল ইসলাম। তার মতে, শ্যামবাজারে রাতে সবজিভর্তি কৃষকের কয়টি ট্রাক এসেছে, এ সময় ব্যাপারীরা কী পরিমাণ সবজি ট্রাকগুলোতে এসেছে এসব খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেন। পরিমাণে কম এলেই পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ভিড় বাড়তে থাকে। তখনই দাম বাড়াতে শুরু করে। এমনও দেখা যায়, শুরুতে যে বেগুন প্রতি কেজি ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, শেষদিকে তা ৭০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।

নিউমার্কেট কাঁচাবাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ী আবুল বলেন, আমরা তো কমদামে সবজি বিক্রি করতে চাই। কিন্তু বিশ্বাস করুন, একটা মাঝারি সাইজের লাউ পাইকারি বাজার থেকে ৫০-৬০ টাকার কম কিনতে পারি না। তার পর ঘাটে ঘাটে দিতে হয় চাঁদা; কখনো পুলিশ, কখনো নেতার লাইনম্যানকে। শ্যামবাজার থেকে ১০ হাজার টাকার সবজি কিনে নিউমার্কেট নিয়ে আসতে বাড়তি খরচ গুনতে হয় ১ হাজার টাকা। এই এক হাজার টাকা আমরা সবজির মোট দামের সঙ্গে যোগ করে তা খুচরা বিক্রি করি। এতে আমাদের লাভ থাকে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা। এই আয়েও আমাদের সংসার চলে না।

তিনি বলেন, ‘আমাদেরও তো পরিবার আছে। তাদের কথা কেউ ভাবে?’ মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়াও দাম বাড়ার পেছনে বড় কারণ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও পুলিশের চাঁদাবাজিকে দায়ী করেন তিনি।

অন্যদিকে রাজধানীর শ্যামবাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতারা জানান, ফুটপাতে দোকান ভাড়া দৈনিক স্থানভেদে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের লাইনম্যানদের দৈনিক চাঁদা দিতে হয় ২০ থেকে ৫০ টাকা। পুলিশের লাইন খরচ দিতে হয় ১০০ টাকা। দৈনিক একটি বাতি জ্বালালে দিতে হয় ১০০ টাকা। এর সঙ্গে নিজের মুনাফার ভাগ। এসব যোগ করলে একটা লাউ ১০০ টাকার কমে কোনোভাবেই বিক্রি করা যায় না।

খুচরা সবজি বিক্রেতা আলিম বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করলেও দৈনিক অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ আছে। এর ভাগ যায় পুলিশ, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় নেতাদের পকেটে।

নবীন নিউজ/পি

এই সম্পর্কিত আরও খবর

আরও খবর

news image

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ফাউন্ডেশনের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

news image

মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮-তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপন

news image

৫০ জনের ৪৮ জনই আসেন তদবির নিয়ে: উপদেষ্টা আসিফ

news image

এক যুগ ধরে ৩৭টি ট্রেনের মধ্যে ৩২টি ট্রেন রিপন-লুনা দম্পতির দখলে

news image

আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের বৈঠক

news image

বাংলাদেশ গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে সই করল 

news image

জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন বাতিলের সিদ্ধান্ত

news image

দুদকে সারজিস ও হাসনাতের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের দল

news image

প্রভাবশালীরা নামে-বেনামে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তার হিসাব হচ্ছে : ড. ইউনূস

news image

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হলেন মাহফুজ আলম

news image

অপ্রয়োজনীয় কোনও প্রকল্প যেন না নেয়া হয়: তথ্য উপদেষ্টা

news image

সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ ৭ বিচারপতির বিরুদ্ধে মামলা

news image

৫ উপদেষ্টার দপ্তর পুনর্বণ্টন

news image

বিএসএমএমইউ’র অধ্যাপক সায়েদুর রহমান নতুন উপাচার্য 

news image

জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী

news image

হজের প্রাথমিক নিবন্ধন শুরু হচ্ছে পহেলা সেপ্টেম্বর

news image

সচিবালয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি ছাত্ররা মোকাবিলা করেছে: আইন উপদেষ্টা

news image

কখন নির্বাচন হবে এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত : ড. ইউনূস

news image

পরিকল্পনা উপদেষ্টার সাথে জাপানের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

news image

সরকার সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় বদ্ধপরিকর : ধর্ম উপদেষ্টা 

news image

পুলিশে কোনো দুর্নীতি মেনে নেয়া হবে না : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

news image

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন মানুষের মনে আশার সঞ্চার করেছে : পার্বত্য বিষয়ক উপদেষ্টা

news image

ড. ইউনূসের সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূতের সাক্ষাৎ

news image

দেশের মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছে আমি অভিভূত : প্রধান উপদেষ্টা

news image

ফেনীতে মোবাইল টাওয়ার সচল রাখতে ডিজেল ফ্রি'র নির্দেশ

news image

ফেনীতে মোবাইল টাওয়ার সচল রাখতে ডিজেল ফ্রি'র নির্দেশ

news image

বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এনজিও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা

news image

রোববার থেকে চলবে মেট্রোরেল

news image

ফেনীতে বন্যাকবলিত এলাকা পরিদর্শনে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান